কোরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

একনজরে কোরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

► ৬১০ খ্রিস্টাব্দ ও রমজান মাসের কদরের রজনীতে হেরা পর্বতের গুহায় সর্বপ্রথম কোরআন অবতীর্ণ হয়।

► অবতীর্ণের মোট সময়কাল ২২ বছর পাঁচ মাস ১৪ দিন।

► প্রথম নাজিলকৃত পূর্ণ সুরা হলো সুরা ফাতিহা।

► সর্বপ্রথম নাজিলকৃত কোরআনের আয়াত হলো সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত।

► কোরআনের প্রথম শব্দ হলো ‘ইকরা’—তুমি পড়ো।

► কোরআনের সর্বশেষ নাজিলকৃত সুরা হলো সুরা আন-নসর এবং সর্বশেষ নাজিলকৃত আয়াত হলো সুরা বাকারার ২৮১ নম্বর আয়াত।

► কোরআন নাজিল শেষ হয় হিজরি ১১ সালের সফর মাসে।

► কোরআনের সর্ববৃহৎ সুরা হলো সুরা বাকারা। এর আয়াত সংখ্যা ২৮৬।

► কোরআনের সবচেয়ে ছোট সুরা হলো সুরা কাওসার। এর আয়াত সংখ্যা ৩।

► পবিত্র কোরআনের মোট সুরা ১১৪টি। এর মধ্যে মাক্কি সুরা (হিজরতের আগে বর্ণিত) ৯২টি, মাদানি সুরা (হিজরতের পরে বর্ণিত) ২২টি।

► কোরআনে মোট ৫৪০টি রুকু আছে।

► প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী কোরআনের মোট আয়াত ছয় হাজার ৬৬৬টি। কিন্তু গবেষকদের দৃষ্টিতে মোট ছয় হাজার ২৩৬টি।

► কোরআনের আয়াতের ধরন—আদেশসূচক আয়াত এক হাজার, নিষেধসূচক এক হাজার, সুসংবাদসূচক এক হাজার, ভীতি প্রদর্শনসূচক এক হাজার, কাহিনীমূলক এক হাজার, দৃষ্টান্তমূলক এক হাজার, হালালসংক্রান্ত ২৫০, হারামসংক্রান্ত ২৫০, দোয়া, জিকির ও তাসবিহসংক্রান্ত ১০০টি।

► কোরআনের মোট শব্দ ৮৬ হাজার ৪৩০টি।

► কোরআনের মোট অক্ষর তিন লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৩টি, মতান্তরে তিন লাখ ৪৯ হাজার ৩৭০টি, মতান্তরে তিন লাখ ৫১ হাজার ২৫২টি।

► কোরআনের মোট মনজিল সাতটি এবং পারা ৩০টি।

► কোরআনের মোট হরকত—জের ৩৯ হাজার ৫৮২, জবর ৫২ হাজার ২৩৪, পেশ হলো আট হাজার ৮০৪, জজম এক হাজার ৭৭১, নুকতা এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৮১, তাশদিদ এক হাজার ৪৫৩, ওয়াকফ্ ১০ হাজার ৫৬৪, মাদ এক হাজার ১৭১ ও আলিফ মামদুদাহ ২৪০টি।

► কোরআনে হরফের সংখ্যা—আলিফ ৪৮ হাজার ৪৭৬ বা ১১ হাজার ৪৪২, তা ১০ হাজার ১৯৯, ছা এক হাজার ২৭৬, জিম তিন হাজার ২৭৩, হা তিন হাজার ৯৭৩, খা দুই হাজার ৪৪৬, দাল পাঁচ হাজার ৬৪২, জাল চার হাজার ৬৭৭, রা ১১ হাজার ৭৯৩, জা এক হাজার ৫৯৩, সিন এক হাজার ৮৯১, শিন দুই হাজার ২৫৩, ছোয়াদ দুই হাজার ১৩, দোয়াদ এক হাজার ৬০৭, তোয়া এক হাজার ২৭৭, জোয়া ৮৪২, আইন ৯ হাজার ২২০, গাইন দুই হাজার ১০৮, ফা আট হাজার ৪৯৯, ক্বাফ ছয় হাজার ৮১৩, কাফ ৯ হাজার ৫০২, লাম ৩৩ হাজার ৪৩২, মিম ২৬ হাজার ৫৬০, নুন ৪৫ হাজার ১৯০, ওয়াও ২৫ হাজার ৫৩৬, হা ১৯ হাজার ৭০, লাম আলিফ চার হাজার ৭২০, ইয়া ৪৫ হাজার ৯১৯টি।

► সর্বপ্রথম কোরআনে নুকতা ও হরকত প্রবর্তন করেন আবুল আসওয়াদ দুয়াইলি, মতান্তরে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ।

► হানাফি মাজহাব মতে, কোরআনে তিলাওয়াতে সিজদা ১৪টি এবং সাকতার সংখ্যা চারটি।

► কোরআনে নবী ও রাসুলের নাম এসেছে ২৫ জনের। ফেরেশতার নাম এসেছে চারজনের। শয়তান শব্দটি এসেছে ৮৫ বার, ইবলিস এসেছে ১১ বার। জিনজাতির প্রসঙ্গ এসেছে ৩২ বার।

► নবীদের মধ্যে পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে বেশি এসেছে মুসা (আ.)-এর নাম। তাঁর নাম এসেছে ১৩৫ বার।

► কোরআনে ছয়জন কাফিরের নাম আছে।

► কোরআনে বিসমিল্লাহ নেই সুরা তওবায়।

► কোরআনে বিসমিল্লাহ দুইবার এসেছে সুরা নামলে।

► কোরআনে বর্ণিত একজন সাহাবি হজরত জায়েদ (রা.)।

► কোরআনে বর্ণিত একজন নারী মারইয়াম বিনতে ইমরান।

► কোরআনের প্রথম ওহি লেখক জায়েদ বিন সাবেত (রা.)।

► কোরআনের মুখপাত্র হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস।

► কোরআনকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে।

► কোরআনের প্রথম সংকলক হজরত ওসমান (রা.)।

► কোরআনের প্রথম ও প্রধান তাফসিরবিদ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)।

রাসূল (সাঃ) এর তারাবি নামাজ

তারাবীহ

তারাবীহ (আরবি: تَرَاوِيْحِ‎‎) শব্দটির একবচন ‘তারবীহাতুন’ (আরবি: تَروِيْحَة‎‎)।

এর আভিধানিক অর্থ বসা, বিশ্রাম করা, আরাম করা।

ইসলাম ধর্মে তারাবীহ হল রাতের সালাত যেটি মুসলিমগণ রমজান মাসব্যপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর পড়ে থাকেন।

 তারাবীহ সালাত দুই দুই রাকআত করে যেকোনো সংখ্যক রাকআত পড়া হয়। তারাবীহ সালাতের পর বিতর সালাত পড়া হয়।

 তারাবীহর নামাজের রাকআত নির্দিষ্ট করা হয়নি। হানাফিশাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকআত, মালিকি ফিকহের অনুসারীগণ ৩৬ রাকআত এবং আহলে হাদীসরা ৮ রাকআত তারাবীহ পড়ে।

বিভক্তি বাদীদের সাথে রাসূলের দায় মুক্তি-

বিভক্তি বাদীদের সাথে রাসূলের দায় মুক্তি-
(ﺇِﻧَّﺎﻟَّﺬِﻳﻦَﻓَﺮَّﻗُﻮﺍﺩِﻳﻨَﻪﻲِﺷﺍﻮُﻧﺎَﻛَﻮْﻣُْﻦِﻤَﺘْﺴَّﻟﺎًﻋَﻫُﻤْﻔِﻴﺸَﻲْﺀٍﺇِﻧَّﻤَﺎﺃَﻣْﺮُﻫُﻢ
ُﺚِﻬَّﻠﻟﺎﻯَﻟِﺇْﻣَّﻴُﻨَﺒِّﺌُﻬُﻢﺑِﻤَﺎﻛَﺎﻧُﻮﺍﻳَﻒَﻥﻮُﻠَﻋْ﴿ﺍﻷﻧﻌﺎﻡ : ١٥٩ ﴾
নিঃসন্দেহ যারা তাদের ধর্মকে বিভক্ত করেছে এবংবিভিন্ন দল হয়ে গেছে, তাদের জন্য তোমার কোনো দায়দায়িত্ব নেই। নিঃসন্দেহ তাদেরব্যাপার আল্লাহ্র কাছে, তিনিই পরকালে তাদের জানাবেন যে তারা কী করেছিল। (৬: ১৫৯)
ব্যখ্যাঃ- ﺇِﻧَّﺎﻟَّﺬِﻳﻨَﻒُﻪَﻨﻳِﺩﺍﻮُﻗَّﺭَﻡْ – যারা বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি করে দ্বীন তথা ইসলামকে বিভক্ত করল, তারপর দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেল। ﻟَّﺴْﺘَﻤِﻨْﻬُﻢْﻓِﻴﺸَﻲْﺀٍ – এর সরল অনুবাদ হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে তুমি (রাসূল) কোন কিছুর মধ্যে নেই অর্থাৎ বিভক্তি বাদীদের সাথে রাসূলের কোন সম্পর্ক বা দায় দায়িত্ব নেই। তাদের অপকর্মের বিষয়টা আল্লাহ্র উপর ন্যস্ত, কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ্ তা’লা তাদের অপকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন অর্থাৎ বিচার করবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিয়ামতে আল্লাহ্ তা’লা কি অবহিত করবেন? এ সম্পর্কে হাউজে কাউসার সংক্রান্ত হাদীসে এসেছে – . ﻳَﻘُﻮﻟُﻼَﺕَﺪْﺣَﺃﺎَﻤﻳِﺭْﺩَ
ﺛُﻮﺍﺑَﻌْﺪَﻙَ – আল্লাহ রাসূল (সাঃ) কে বলবেন, আপনি তো জানেন না আপনার পরে তারা কী বিদাত সৃষ্টি করেছে অর্থাৎ নতুন মতবাদ সৃষ্টি করে বিভক্ত হয়ে গেছে।
মুফাসসীরীনে কেরামের মতামতঃ- ﺇِﻧَّﺎﻟَّﺬِﻳﻨَﻒُﻪَﻨﻳِﺩﺍﻮُﻗَّﺭَﻡْ -মুজাহিদ, কাতাদা, সুদ্দি, দাহহাক- তারা বলেন, অত্র আয়াত দ্বারা ইহুদি-নাসারা উদ্দেশ্য, তারা আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য করে থাকে। কেউ বলেন এখানে মুশরিকরা উদ্দেশ্য। কেউ কেউ বলেন আয়াতটি ব্যাপকার্থক- যাতে সকল প্রকার কাফের ও বিদাতিরা অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম তাবারি বলেন, কারো কারো মতে এ আয়াত দ্বারা ইহুদি নাসার উদ্দেশ্য। তবে সঠিক কথা হচ্ছে, অত্র আয়াত দ্বারা এ উম্মতের আহলে বিদাত উদ্দেশ্য। কারণ হাদিস পাওয়া গেলে অন্য কারো কথা গ্রহণ যোগ্য নয়। যেমন –
ﻋﻨﺄﺑﻴﻬﺮﻳﺮﺓﻗﺎﻝ : ‏( ﺇﻧﺎﻟﺬﻳﻨﻔﺮﻗﻮﺍﺩﻱﻧﻬﻢ ‏) ،ﻗﺎﻝ : ﻧﺰﻟﺘﻬﺬﻫﺎﻵﻳﺔﻓﻴﻪ
ﺫﻫﺎﻷﻣﺔ . ‏)
ﻋﻨﻄﺎﻭﺱ،ﻋﻨﺄﺑﻴﻬﺮﻱﺭﺓ : ‏( ﺇﻧﺎﻟﺬﻳﻨﻔﺮﻗﻮﺍﺩﻱﻧﻬﻤﻮﻛﺎﻧﻮﺍﺷﻴﻌًﺎ ‏) ،ﻗﺎﻝ : ﻫﻤﺄﻫﻼﻟﺼﻼﺓ .
অর্থাৎ আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, উক্ত আয়াত এ উম্মতের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে।
ﻋﻨﺄﺑﻴﻬﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻟﺮﺳﻮﻻﻟﻠﻬﺼﻠﻯﺎﻟﻠﻬﻌﻠﻴﻬﻮﺳﻠﻢ،ﻓﻴﻪ
ﺫﻫﺎﻵﻳﺔ “: ‏( ﺇﻧﺎﻟﺬﻳﻨﻔﺮﻗﻮﺍﺩﻱﻧﻬﻤﻮﻛﺎﻧﻮﺍﺷﻴﻌًﺎﻝ
ﺳﺘﻤﻨﻬﻤﻔﻴﺸﻲﺀ ‏) ،ﻭﻟﻴﺴﻮﺍﻣﻨﻚ،ﻫﻤﺄﻩﻻﻟﺒﺪﻉ،ﻭﺃﻫﻼﻟﺸﺐ
ﻫﺎﺕ،ﻭﺃﻫﻼﻟﻀﻼﻟﺔﻣﻨﻬﺬﻫﺎﻷﻣﺔ .
আবু হুরায়রার অন্য বর্ননায় এসেছে, রাসুল (সা) ইরশাদ করেন, এ আয়াত দ্বারা তোমরা (সাহাবাগন) উদ্দেশ্য না, বরং এ উম্মতের বিদাতী, প্রবৃত্তির অনুসারী গুমরাহ লোকেরা উদ্দেশ্য।
আবু জাফর বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে আল্লাহ তার নবীকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, যে বা যারা দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি আনবে, বিভিন্ন ফিরকায় বিভক্ত হবে রাসূল তাদের থেকে দায়মুক্ত আর তারাও রাসূল থেকে দায়মুক্ত। তারপর ইমাম তাবারি বলেন, উক্ত আয়াত ব্যাপকার্থক যা দ্বারা মুশরিক, মুর্তিপুজক, ইহুদি নাসার বিদাতি সবাই উদ্দেশ্য।
ইমাম বগবী বলেন-
ﻋَﻨِﺎﻟْﻌِﺮْﺑَﺎﺽﻕَﺔَﻳِﺭﺎَﺴِﻨْﺑَِﻝﺍَ : ” ﺻَﻠَّﻯﺒِﻨَﺎﺭَﺱّﻞَﺼِﻬَّﻠﻟﺎُﻟﻭُْﻲَﻠَﻌُﻬَّﻠﻟﺎﻯَ
ﻫِﻮَﺳَﻠَّﻤَﺎﻟﺺَّﻦَﻈَﻋَﻮَﻔَﺤْﺑُﺍﻣَﻮْﻋِﻈَﺔًﺑَﻞِﻳﻐَﺔًﺫَﺭَﻓَﺘْﻢِﻧْﻬَﺎﺍﻟْﻌُﻴُﻮﻥُ،ﻭَﻭَﺟِﻠَﺘْﻤِﻦْ
ﻫَﺎﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏُ، —————— ﻭَﺇِﻳَّﺎﻛُﻤْﻮَﻡُﺄْﻟﺎِﺗﺎَﺛَﺪْﺣُﻣُﻮﺭِ،ﻓَﺈِﻧَّﻚُﻟَّﺒِﺪْﻋَﺔٍﺿَﻞَ
ﺍﻟَﺔٍ “
হজরত ইরবাজ বিন সারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে উপদেশ দিলেন, তাতে চক্ষু প্রবাহিত হল অন্তর বিগলিত হল। আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মনে হচ্ছে ইহা বিদায়ী উপদেশ ! আমাদেরকে কী নির্দেশ দেন? তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে শুভ্র আলোকবর্তিকার (কোরআন) উপর রেখে গেলাম- যার রাত্রও দিনের ন্যায় আলোকময়। একমাত্র ধ্বংস প্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ উহার বক্র পথে চলবে না। যারা বেঁচে থাকবে অনেক এখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে, আমার পরে যা আমার এবং হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত বলে বুঝতে পারবে-তা আঁকড়ে ধরবে, এমনকি দাঁত দিয়ে কামড়ে পড়ে থাকবে। সাবধান, নতুন সৃষ্ট-বিদাত থেকে বেচে থাকবে, কারণ প্রত্যেক বিদাত গুমরাহী।
ﻭَﺭُﻭِﻳَﻌَﻨْﻌَﺐﻊِﻨْﺒِﻬَّﻠﻟﺍِﺩَْﻝﺎَﻗَﺮَﻣُ : ﻗَﺎﻟَﺮَﺳُﻮﻟُﺎﻟﻞَّﻞﻟﺎﻯَّﻠَﺼِﻫَّﻫُﻌَﻠَﻴْﻬِﻮَﺳَﻞَﻡَّ : ” ﺇِﻧْﺒَﻨِﻴﺈِﺳْﺮﻕَّﺮَﻔَﺘَﻠﻴِﺋﺍَْﻲَﻨْﺛﺎﻯَﻠَﻌْﺗَﻧِﻮَﺳَﺒْﻌِﻴﻨَﻒِﺭْﻗَﺔً،ﻭَﺗَﻔَﺮَّﻊﻴِﺘَّﻣُﺄْﺘَﻗَ
ﻟَﻯﺜَﻠَﺎﺛٍﻮَﺳَﺐًﺔَّﻠِﻤَﻨﻴِﻋْ،ﻙّﻦﻟﺎﻴِﻔْﻤُﻬُّﻟُِﺡﺍَﻭﺎَّﻟِﺇِﺭﺍَﺩَﺓً ” ،ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻣَﻨْﻬِﻴَﻴَﺎﺭَﺱُ
ﻭﻟَﺎﻟﻠَّﻪِ؟ﻗَﺎﻝ:َ ” ﻣَﺎﺃَﻧَﺎﻋَﻠَﻲْﻫِﻮَﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻲ
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্নিত- তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় বনী ইসরাঈল ধর্মের ব্যাপারে মতভেদ সৃষ্টি করে ৭২ ফিরকায় বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হবে। অর্থাৎ সবাই প্রবৃত্তির বশীভুত হয়ে পড়বে।তাদের একটি দল ব্যতীত সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন, মুক্তি প্রাপ্ত দলটি কারা হে আল্লাহ্র রাসুল? তিনি উত্তর দিলেন, আমি এবং সাহাবিগন যার উপর আছি- যারা এর (ঐক্যের) উপর থাকবে। অন্য হাদিসে এসেছে সেই দলটি হল জামাত।
ﻗَﺎﻟَﻌَﺒْﺪُﺍﻟﻞّﺩﻮُﻌْﺴَﻤُﻨْﺒِﻫَ:ٍ ” ﻓَﺈِﻧَّﺄَﺣْﺴَﻦَﺖِﻜِﺜﻳِﺪَﺤْﻟﺍَﺍﺑُﺎﻟﻠَّﻪِ،ﻭَﺃَﺣْﺴَﻨَﺎﻟْﻬَﺪْﻱِ
ﻫَﺪْﻳُﻤُﺤَﻤَّﺪٍﺻَﻠَّﻯﺎﻟﻠَّﻬُﻊَﻟَﻴْﻬِﻮَﺳَﻠَّﻢَُ ﻭَﺷَﺮَّﺍﻟْﺄُﻣُﻮﺭِﻣُﺤْﺪَﺛَﺎﺗُﻪَﺍ “
অর্থাৎ ইবনে মাসউদ বলেন, শ্রেষ্ঠ সত্য বানী হল আল্লাহ্র কিতাব, সর্বোত্তম হেদায়াত হল মুহাম্মদ (সাঃ) এর হেদায়েত। সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুন সৃষ্ট বিষয়, অর্থাৎ বিদাত।
তারপর ইমাম বগবি বলেন, যাদের মতে উক্ত আয়াত দ্বারা প্রবৃত্তির অনুসারী বিদাতি উদ্দেশ্য তারা বলেন, সেসব বিদাতিদের থেকে রাসূল (সাঃ) দায়মুক্ত, তারাও রাসূল (সাঃ) থেকে বিচ্ছিন্ন। বিষয়টা আল্লাহ্র উপর ন্যস্ত, কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিচার করবেন।
তাফসীরুল হাদীস গ্রন্থকার বলেন,
ﻭﺣﺪﻳﺜﺮﻭﺍﻫﺎﻟﺸﻴﺨﺎﻧﻮﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻴﻌﻨﺠﺎﺑﺮﻋﻨﺎﻟﻨﺒﻴﺼﻠﻯﺎﻟﻠﻬﻊﻟﻴﻬﻮﺳﻠﻤﻘﺎﻝ : ‏« ﺇﻧﺄﺻﺪﻗﺎﻟﺤﺪﻳﺜﻜﺖﺍﺑﺎﻟﻠﻪ،ﻭﺃﺣﺴﻨﺎﻟﻪﺩﻯﻬﺪﻯﻤﺤﻤّﺪ . ﻭﺷﺮّﺍﻷﻣﻮﺭﻣﺤﺪﺛﺎﺗﻬﺎ،ﻭﻛﻠّﻤﺤﺪﺛﺔﺑﺪﻋﺔ،ﻭﻛﻠّﺒﺪﻋﺔﺿﻼﻝ
ﺓ،ﻭﻛﻠّﻀﻼﻟﺔﻓﻴﺎﻝﻧﺎﺭ ‏»
ﻭﻣﻌﻠﻮﻣﺄﻧﺄﺋﻤﺔﺍﻟﻢﺫﺍﻫﺒﺎﻟﻤﺸﻬﻮﺭﺓﺍﻟﺬﻳﻨﺘﻮﺍﺗﺮﺗﺎﻟﺮﻭﺍﻳﺎ
ﺗﻌﻨﺤﺮﺻﻬﻤﻌﻠﻯﺎﺗﺒﺎﻋﻜﺘﺎﺑﺎﻟﻠﻬﻮﺳﻨﺔﺭﺱﻭﻟﻬﻮﻟﻤﻴﻜﻮﻧﻮﺍﻣﻨﺄ
ﻫﻼﻟﺒﺪﻋﻮﺍﻷﻫﻮﺍﺀ
অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, শ্রেষ্ঠ সত্য বানী হল আল্লাহ্র কিতাব, সর্বোত্তম হেদায়াত হল মুহাম্মদ (সাঃ) এর হেদায়েত। সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুন সৃষ্ট বিষয়, প্রত্যেক নবসৃষ্ট বিদাত, আর প্রত্যেক বিদাত গুমরাহী, আর প্রত্যেক গুমরাহীর ঠিকানা জাহান্নাম।
দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি বলেন যে, প্রসিদ্ধ মযহাবের ইমামগন- যাদের রয়েছে বর্ননার আধিক্য, কোরান সুন্নাহর আনুগত্যে তাদের সর্বাত্মক আগ্রহি থাকার কারনে তারা আহলে বিদাত বলে গণ্য হবেন না।
ইমাম কুরতুবি বলেন- কারো কারো মতে উক্ত আয়াত দ্বারা মুশরিকরা উদ্দেশ্য, কেউ বলেন সকল কাফের উদ্দেশ্য। তবে সঠিক কথা হচ্ছে এখানে বিদাতিরা উদ্দেশ্য- যারা ইসলামের মধ্যে নতুন নতুন মতবাদ উদ্ভাবন করে ফিরকা- বিভাজন সৃষ্টি করে। কারণ হাদিস পাওয়া গেলে সেখানে অন্য কারো ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন-
ﻋَﻨْﺄَﺑِﻴﻬُﺮَﻱْﺭَﺓَﺃَﻧَّﺎﻟﻨَّﺐَّﻞﻟﺎﻯَّﻠَﺼَّﻳِﻫُﻌَﻠَﻴْﻬِﻮَﺳَﻞَﺃَﺮَﻘَﻣَّ ” ﺇِﻧَّﺎﻟَّﺬِﻳﻨَﻒُﻪَﻨﻳِﺩﺍﻮُﻗَﺭﺍَ
ﻡْ .” ﻭَﻣَﻌْﻨَﻰ ‏( ﺷِﻴَﻌﺎً ‏) ﻓِﺮَﻗًﺎﻭَﺃَﺣْﺰَﺍﺑًﺎ . ﻭَﻛُﻠُّﻘَﻮْﻣٍﺄَﻣْﺮُﻫُﻤْﻮَﺍﺣِﺪٌﻳَﺘَّﺒِﻌُﺒَﻌْﺾُ
ﻫُﻤْﺮَﺃْﻳَﺒَﻌْﺾٍﻓَﻬُﻤْﺸِﻴَﻊٌ.
অর্থাৎ আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসুল (সা) উক্ত আয়াত পাঠ করে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, প্রত্যেক দলের অবস্থা একই- তারা একে অন্যের রায় মেনে চলে। কাজেই এরা সবাই শিয়া বা বিভিন্ন দল। ব্যাখ্যাঃ ফিরকাগুলি নিজেদের মুরুব্বিদের রায় মেনে চলে।
ﻭَﺭَﻭَﻯﺄَﺑُﻮﻫُﺮّﻦﻟﺎِﻨَﻋَﺓَﺮْﻳَﻞﻟﺎﻯَّﻠَﺼِّﻴِﺑَﺱَﻮِﻬْﻴَﻠَﻌُﻫَِّﻩِﺬَﻬﻴِﻔَﻤَّﻟَﺍﻟْﺂﻳَﺔِ ” ﺇِﻧَّﺎﻟَّﺬِﻳﻨَﻒ
ُﻪَﻨﻳِﺩﺍﻮُﻗَّﺭَﻡْ ” ﻫُﻤْﺄَﻫْﻠُﺎﻟْﺐِﺩَﻋِﻮَﺍﻟﺸُّﺒُﻪَﺍﺕِ،ﻭَﺃَﻫْﻠُﺎﻟﺾَﻪْﻨِﻣِﺔَﻟﺎَﻟَّﺫِﻫِﺎﻟْﺄُﻣَّﺔِ . ﻭَﺭَﻭَﻯﺒﻘﻴﺔﺑﻨﺎﻝﻭﻟﻴﺪﻋَﻨْﻌُﻤَﺮَﺏﺮِﺑﺎَّﻄَﺨْﻟﺎِﻧْﻦَﻌُﻬَّﻠﻟﺎَﻴِﺿََﻝﻮُﺳَﺮَّﻧَﺄُﻫْ
ﺍﻟﻠَّﻬِﺼَﻠَّﻯﺎﻝﻟَّﻬُﻌَﻠَﻴْﻬِﻮَﺳَﻠَّﻤَﻘَﺎﻟَﻠِﻊَﺔَﺸِﺋﺍَ : ‏( ﺇِﻧَّﺎﻟَّﺬِﻳﻦَﻓَﺮَّﻗُﻮﺍﺩِﻳﻨَﻪَﻲِﺷﺍﻮُﻧﺎﻛَﻮْﻣُ
ﻋﺎًﺇِﻧَّﻤَﺎﻫُﻢْﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﺎﻟْﺒِﺪﺎُﺑﺎَﺤْﺻَﺃَﻮِﻋَﻟْﺄَﻫْﻮَﺍﺀِﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﺎﻟﻀَّﻠَﺎﻟَﺔِﻣِﻨْﻬَﺬِﻫِﺎ
ﻟْﺄُﻣَّﺔِ،ﻳَﺎﻉَﺍﺋِﺸَﺔُﺇِﻧَّﻠِﻚْﻥَﺬِﺒِﺣﺎَﺼِّﻟُﺑٍﺘَﻮْﺑَﺔًﻏَﻴْﺮِﺐْﻟﺎِﺑﺎَﺤْﺻَﺃَﺩَﻋِﻮَﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ
ﺍﻟْﺄَﻫْﻮَﺍﺀِﻟَﻲﺏﺎﻧﺃﻭﺔﺑﻮﺘﻤﻬﻠَﺳْﺭﺋﻤِﻨْﻬُﻤْﻮَﻫُﻢُﺀﺁَﺮُﺑﺎَّﻨِﻣْ ‏) .
অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা এবং হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ)কে বলেন- ﺇِﻧَّﺎﻟَّﺬِﻳﻨَﻒُﻪَﻨﻳِﺩﺍﻮُﻗَّﺭَﻡْ – উক্ত আয়াত দ্বারা এ উম্মতের বিদাতী, প্রবৃত্তির অনুসারী ও গুমরাহ লোকেরা উদ্দেশ্য। হে আয়েশা, প্রত্যেক গুনাহগারের তাওবা আছে কিন্তু বিদাতী ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের কোন তাওবা নাই অর্থাৎ তাদের তাওবা কবুল করা হয় না। আমি তাদের থেকে দায়মুক্ত তারাও আমার থেকে মুক্ত, বিচ্ছিন্ন।
ﻭﺃﻧﺎﺑﺮﺋﻤِﻨْﻬُﻢْﻭَﻫُﻤْﻤِﻨَّﺎﺑُﺮ َﺁﺀُ ).) আমি তাদের থেকে দায়মুক্ত তারাও আমার থেকে মুক্ত – এর ব্যাখ্যাঃ
অত্র হাদীস ফিরকাবাজদের জন্য ভয়াবহ বিপদ সংকেত। এতে বুঝা যায়, শিয়া, সুন্নী, বেরেলভী, দেওবন্দী, জামাতী, তাবলিগী, সুফিবাদী, ব্রাদারহুড, তালেবান, আইসিস ইত্যাদির সাথে রাসূল (সাঃ) এর কোন সম্পর্ক নাই। রাসূল (সাঃ) তাদের থেকে দায়মুক্ত তারাও রাসূল (সাঃ) থেকে বিচ্ছিন্ন-সম্পর্কহীন। কারণ তারা বিদাত তথা নতুন নতুন মতবাদ সৃষ্টি করে একেকটা ফিরকা গঠন করে জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হায় আফসোস, হায় সর্বনাশ। এখনো কী তাদের হুস হবে না।
ﻏَﻴْﺮَﺃَﺻْﺤَﺎﺏِﺍﻟْﺒِﺪَﻋِﻮَﺃَﺹْﺣَﺎﺑِﺎﻟْﺄَﻫْﻮَﺍﺀِﻟَﻴْﺴَﻠﻬﻤﺘﻮﺑﺔ ).) কিন্তু বিদাতী ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের কোন তাওবা নাই- এর বাখ্যাঃ
অনন্তর উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর কারকগন বিদাতের উপর গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। তৎসংক্রান্ত হাদীস ও মনিষীদের অনেক উক্তি নকল করেছেন। বিদআত এমনই ভয়ঙ্কর পাপ যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন অন্য সকল গুনাহের তওবা আছে কিন্তু বিদাতের কোন তওবা নাই। কারণ, অন্যান্য কবিরা গুনাহ যেমন চুরি, ডাকাতি, খুন, যিনা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা, চাদাবাজি ইত্যাদির সমাধান আছে অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দিয়ত বা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলেই পার্থিব ক্ষতিপুষিয়ে যায়। কিন্তু বিদআত এমনই সর্বগ্রাসী ও সর্বনাশা বিষয় যে, এটা উম্মাহ ও মানব সভ্যতা ধ্বংস করে দেয়। যেমন উম্মাহর মধ্যে ফিরকা বিভক্তির কারণ হচ্ছে বিদআত। প্রত্যেকটা দল ইসলামের নামে ইসলামের মধ্যে একেকটা বিদআত সৃষ্টি করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তারপর বিভক্ত হয়ে গেছে। এভাবে অসংখ্য ফিরকায় বিভক্ত হয়ে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। একে অন্যের বিরুদ্ধাচরন করে পরস্পরকে হত্যা করছে, দুবর্লতর জাতিতে পরিণত হয়েছে। আর এ সুযোগে কাফেররা মহাউল্লাসে তাদের নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কাজেই বিদাতের পরিণতি বিভক্তির ফলে উম্মাহর যে ক্ষতি হচ্ছে তার কোন ক্ষতিপূরণ নাই বিধায় তওবা নাই।
যেমন উম্মাহর দুবর্লতার সুযোগে ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মির, চিনা তুর্কিস্তানসহ আরো অন্যান্য ভূমি কাফেররা দখল করে আছে। লক্ষ লক্ষ মুসলিম হত্যা করছে। বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করছে, সম্পদ শোষণ করছে, আবার মুসলিম দেশগুলিতে ফিরকাবাজরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ধ্বংস করছে। এই যে বিপুল ক্ষতি এসবের কি কোন ক্ষতিপূরণ হতে পারে,ক্ষতিপূরণ সম্ভব? ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয় বিধায় তওবাও সম্ভব নয়। এজন্যই বিদআত সৃষ্টিকারী ফিরকাবাজদের কোন তওবা নাই অর্থাৎ তাদের তওবা কবুল করা হয় না। তওবা কবুল হয় না বলেই নামায, রোযা, দোয়া কবুল হয় না। দোয়া কবুল হয় না বলেই উম্মাহর জন্য আমাদের দোয়া ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে আজ উম্মাহ অজাত, কুজাত, বেজাতের হাতে মার খেয়ে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে উপনিত হয়েছে।
একজন আলেম দাঁড়িয়ে বলল, না না আমরা তো বিদআত সৃষ্টি করিনি, আমরা হক পন্থি, হকের উপর আছি। মোজাহিদ বলল, এ দাবী সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। কারণ বিদাতের সংজ্ঞা হচ্ছে ধর্মের নামে এমন কোন নতুন বিষয় সৃষ্টি করা এবং সওয়াবের নিয়তে অনুশীলন করা যা রাসূল (সাঃ)ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না। কাজেই এখন আমরা প্রতিটি ফিরকার মতবাদে বিদআত অনুসন্ধান করব। তবে তাদের সম্পূর্ণ মতবাদ তুলে ধরা সম্ভব নয়। সংক্ষেপের খাতিরে দুয়েকটি করে পয়েন্ট উল্লেখ করব। যেমন শিয়া মতবাদে হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফত তত্ত্ব, সুন্নীদের মধ্যে বেরেলভীদের রাসূল (সাঃ) নূরের সৃষ্টি ও গায়েবজ্ঞান তত্ত্ব, জামাতের সাহাবাগণের মি’ইয়ারে হক তত্ত্ব, তাবলীগের জিহাদ ও খেলাফত ব্যবস্থার বিকল্প দাওয়াত তত্ত্ব, ব্রাদারহুড ও জামাতের পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক- গণতন্ত্রের চাঁচে ঢেলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা তত্ত্ব, ওহাবি-সালাফীদের তাকলিদ ও শিরক বিদআত নির্মূল তত্ত্ব, দেওবন্দীদের ধর্মীয় ও বস্তুবাদী শিক্ষা তত্ত্ব। এভাবে প্রত্যেকটি ফিরকা নতুন নতুন তত্ত্ব জন্ম দিয়ে মুসলিম জামাত থেকে খারেজ হয়ে গেছে।
এখন আপনাদের কাছে প্রশ্ন হলো, এসব মতবাদ রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল কিনা? এমনকি খায়রুল কুরুনে ছিল কিনা ? তদুপরি কোরআন হাদীসে এসব মতবাদ আছে কিনা ? যদি থাকে তাহলে বিদআত নয়, আর যদি না থাকে তাহলে বিদআত। তদুপরি এসব বিষয় পার্থিব যেমন বিয়ে, চাকরি, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এবং পারলৌকিক যেমন নামায, রোযা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন উপকারে আসে কিনা?যেমন পাত্র পাত্রিকে বা ইন্টারভিউয়ে এমন প্রশ্ন করা হয় কিনা যে, রাসূল কিসের সৃষ্টি , সাহাবাগণ অনুসরণ যোগ্য কিনা ইত্যাদি। সবাই সমস্বরে জবাব দিল, না না, এসব বিদাত রাসুল ও পরবর্তি যুগে ছিল না আর এগুলি ইহকাল ও পরকালের জন্যও কোন প্রয়োজনীয় বিষয় নয়।
মোজাহিদ বলল, তাহলে বুঝা যাচ্ছে এসব মতবাদ শুধুমাত্র উম্মাহর ইহকাল- পরকাল ধ্বংসের হাতিয়ার বা উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, কোন কল্যাণের অবলম্বন নয়। আবার এ বিদআত সৃষ্টির মাধ্যমে দুটি ভয়ঙ্কর অপরাধ সংগঠিত হলো। ১। বিদাতীর দোয়া কবুল হয় না, সে জাহান্নামী। ২। এ বিদাতের ভিত্তিতে যখনই পৃথক ফিরকা হয়ে গেল সাথে সাথেই তারা কাফের হয়ে গেল।.. ﻳَﻮْﻣَﺘَﺐ
َﻮٌﻫﻮُﺟُﻮُّﻀَﻳْﺗَﺴْﻮَﺩُّﻭُﺟُﻮﻩ ٌۚ. . আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কাজেই এখন বিদআত পরিত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ব্যতীত উম্মাহর ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তির দ্বিতীয় কোন পথ নেই। আর ঐক্যের দায়িত্ব আলেম সমাজের উপর।
বিধানঃ উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা গেল, দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হারাম, যারা এমন অপকর্ম করবে তাদের সাথে রাসূল (সাঃ) এর কোন সম্পর্ক থাকবে না, কিয়ামত দিবসে রাসূল তাদের কোন দায় দায়িত্ব বহন করবেন না। ইহুদী খৃষ্টানরা যেভাবে নিজেদের ধর্মে এখতেলাফ করে, বিভক্তি এনে ধ্বংস হয়ে গেছে তদ্রুপ মুসলমানরাও ইসলামের মধ্যে বিভক্তি আনলে ধ্বংস হয়ে যাবে। কাজেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে খোদার দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
অনুসিদ্ধান্তঃ উক্ত আয়াতের আলোচনায় বুঝা গেল যে, যারা নিজেদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দল বা ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে তাদের সাথে রাসূল (সাঃ) এর কোন সম্পর্ক নাই, পরকালে রাসূল তাদের দায় দায়িত্ব বহন করবেন না, আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। এখন বাস্তবতা হল, আমরা দ্বীনকে বিভক্ত করে বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত হয়ে আছি। কাজেই সবাই এমর্মে আত্ম স্বীকৃতি দান করুন যে, ইহকালে পরকালে রাসূল (সাঃ) এর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই, আল্লাহ আমাদের বিচার করবেন। চুপ থাকবেন না, সবাই কথা বলুন। কিন্তু কেউ কথা বলল না, মাথা নিচু করে বসে রইল। হাসান মুসান্না দাঁড়িয়ে হেসে বললেন, ‘নীরবতা সম্মতির লক্ষণ, তাহলে কি বুঝে নেব যে, ‘রাসূল (সা) এর সাথে কোন সম্পর্ক নাই’ আপনারা এ কথার স্বীকৃতি দিলেন।
তখনি সকলেই দাঁড়িয়ে উঠল আর চিৎকার চেচামেচি শুরু করল। হলের মধ্যে হৈ হুল্লা ও হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। কেউ বলল, আমরা ইসলাম পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দলে যোগ দিয়েছি কাউকে নেতা বানানোর জন্য, পয়সা কামানোর জন্য যোগ দেইনি। কেউ বলল, আমাদের ইসলাম প্রিতির সুযোগ নিয়ে আমাদেরকে বিভক্ত করা হল কেন? কেউ ফিরকাবাজদের অভিসম্পাত রতে লাগল। কেউ বলল, আমাদের মুরুব্বিরা কোরান হাদীসের বিধান লঙ্ঘন করে আমাদেরকে বিভক্ত করে ইহকালে মৃত্যুর দিকে আর পরকালে জাহান্নামের পথে ঠেলে দিয়েছে। এরা আমাদের সাথে বেইমানি করেছে আর আল্লাহ রাসূল (সাঃ) এর সাথে গাদ্দারি করেছে। কাজেই এদের বিচার হতে হবে, অবশ্যি বিচার হতে হবে। তারপর সবাই সমস্বরে চিৎকার শুরু করল ‘আমরা ফিরকাবাজ আলেমদের বিচার চাই, বিচার চাই। ওদের মৃত্যুদণ্ড চাই।
হাসান মুসান্না দু’হাত তুলে সবাইকে শান্ত করে বললেন, এতক্ষণে আমাদের হুশ হল যে, ফিরকাবন্ধি থেকে আমরা কুফুরির উপর ছিলাম। আর ফিরকাবাজ আলেমদের হত্যা বা ধ্বংস করতে হবে, নচেৎ এরা যতদিন বেচে থাকবে ফিরকাবাজি করেই যাবে, উম্মাহর ঐক্য সম্ভব হবে না। কাজেই আমরা জনগন ও সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি ইনকুইজিশন কোর্ট বা শরীয়া আদালত গঠন করে ফিরকাবাজদের বিচার করতে হবে। নচেৎ আমরাই শরীয়া আদালত গঠন করে তাদের বিচার করব, তখন সরকাব আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এখন সবাই ফিরকাবাজী থেকে তওবা করুন, ফিরকাবাজ আলেমদের বিচারের অঙ্গিকার করুন আর এই তওবা ও অঙ্গিকার সমগ্র উম্মাহর তওবা ও অঙ্গিকার বলে গণ্য হবে। তারপর নারা বুলন্দ করুন, ‘ফিরকাবাজ থাকলে ইসলাম থাকবে না, ইসলাম না থাকলে আমরা থাকব না, আমরা থাকলে ফিরকাবাজ থাকবে না। সবাই তওবা করল আর ফিরকাবাজ ধ্বংসের শপথ গ্রহণ করল।
এরপর তিনি বললেন, রাত অনেক হয়েছে আজকের মত আমাদের মজলিস এখানেই সমাপ্ত হল। আস- সালামু আলাইকুম, খোদা হাফেজ।
২১
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ
হাসান মুসান্নার আসর থেকে আসার পর জামাল কেমন যেন উদভ্রান্তের মত হয়ে গেল। কোন কিছুতেই আকর্ষন নাই, লেখা পড়ায় মনোযোগ নাই। সব সময় অন্য মনস্ক হয়ে থাকে, ভিতরে প্রচণ্ড ভাঙ্গাগড়া শুরু হয়ে গেছে। তার সারা জীবনের বোধ বিশ্বাস হারিয়ে গেছে। এতদিন সে জানত একমাত্র দেওবন্দিরাই সঠিক ইসলামের উপর আছে, অন্যরা সবাই ভ্রান্ত। কিন্তু হাসান মুসান্নার মজলিসে তো ফিরকাবাজির কারনে কোরান হাদীস দ্বারা সবাই কাফের প্রমানিত হল, জামালের শরীরটা কেঁপে উঠে, সে সবাইকে কাফের মানতে রাজি, এমনকি সেও এটাই চায় কিন্তু দেওবন্দিরা কাফের হবে- এটা সে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারল না। সে সিদ্ধান্ত নেয় ঐ বিতর্কের মজলিসে আর যাবে না।
মাদরাসার ছাত্ররা হাসান মুসান্না ও মাওঃ মোজাহিদের আলোচনা করে, প্রশংসা করে কিন্তু জামাল তাদের সাথে যোগ দেয় না, দূরে দূরে থাকে আর ভাবে এরা মাদরাসায় লেখাপরা করে নিজেদের কাফের তকমা কি করে মেনে নেয়। কিন্তু যখনি সে আলোচ্য আয়াত ও হাদীসের প্রতি লক্ষ করে তখনি তার শরীরটা অবশ হয়ে আসে, তার বিশ্বাসের প্রাচীর ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। বিষয়টা এমন হয়ে দাড়ায়, যে ব্যক্তিকে সে সারা জীবন বাবা হিসাবে জেনে এসেছে হঠাৎ কেউ দলীল দিয়ে প্রমাণ করল যে, ঐ ব্যক্তি তার বাবা নয়। অথবা সর্যোদয় কালিন সময়কে সে দিন জেনে এসেছে কিন্তু কেউ প্রমাণ করল যে এটা রাত। এসব বিষয় তার কাছে যেমন অবিশ্বাস্য ঠেকে তদ্রুপ দেওবন্দিরা কাফের এটাও তার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকে। সে সিদ্ধান্ত নেয় ঐ মজলিসে আর যাবে না, এমনকি এ মাদরাসায় ও আর থাকবে না।
প্রতিদিন বিকালে তারা ব্রক্ষপুত্রের তীরে ঘোরা ফিরা করে, হাওয়া খায়। নিয়মানুযায়ি তারা হাঁটতে গেল, সাথে আছে তাদের ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবি ও প্রভাব শালী ছাত্র মোজাম্মেল। হাসান মুসান্নার আলাপ উঠল। জামাল জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা লোকটা কি ভণ্ড নাকি, সবাইকে কাফের ঘোষণা দেয়। মোজাম্মেল বলল, ‘তিনি নিজে তো কোন মত প্রকাশ করেন না, কোরান হাদীস দ্বার যা প্রমানিত হয় সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি তিনি শুধু রায় প্রকাশ করেন। কাজেই তিনি ভণ্ড হতে যাবেন কোন দুঃখে।
জামাল আবার জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা লোকটা কে, কোত্থেকে এল? মোজাম্মেল বলল, আরে তুমি এখনো তাকে চিন না। তিনি একজন বিখ্যাত আলেমের সন্তান, বিভিন্ন লাইনে লেখাপড়া করেছেন। প্রথমে কওমি মাদরাসায় কিছুদিন বোখারির খেদমত করেছেন, তারপর একটা আলিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস পদে যোগ দেন। কিন্তু আলিয়া মাদরাসায় ইলম কালাম নাই আমল নাই, আছে শুধু নকল, আরো অনান্য কুৎসিত কর্মকান্ড দেখে তার মন উঠে যায়। এরপর তার উপর একটার পর একটা বিপর্যয় নেমে আসতে থাকে। তার একটা মেয়ে বাচ্চা ছিল, এরপরেও তার সংসার ভেঙ্গে যায়। এক ভার্সিটির শিক্ষকের সাথে তার স্ত্রির বিয়ে হয়ে যায়। বাচ্চাটিকে ঐ মহিলা সাথে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আর উনাকে তার বাচ্চার সাথে সাক্ষাত করতে দেয়া হয়নি।
এদিকে হেফাযত ও জামাতের আন্দোলনের সময় তার কয়েকজন ছাত্র ও একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মারা যায়, তিনি একেবারে ভেঙ্গে পরেন। তখন চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দেয়ার কারনে তার ভাইয়েরা সব সময় গালাগালি করে। মনের দুঃখে তিনি বাড়ি ছেড়ে ময়মনসিংহে এসে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেন এবং পেট চালানোর জন্য ছাত্র পড়ানো শুরু করেন। প্রতিদিন এশার পর তিনি মসজিদে আলোচনা করতেন। তার আলোচনা শুনে আমাদের মোজাহিদ সাব, ডাঃ ফখরুজ্জামান, শাখাওয়াত সাব আরো অনেক বড় বড় লোক তার ভক্ত হয়ে যায়। এরপর ফখরুজ্জামান সাব বিনা ভাড়ায় ঐ হল ঘরটা দিয়ে দেন। তারপর সবাই একটা দুইটা করে চেয়ার কিনে দিল, এখন সেখানে জমজমাট হয়ে মজলিস চলছে, তুমি তো দেখেই এসেছ। আসলে হাসান মুসান্নার উদ্দেশ্য হচ্ছে সকল ইসলামী দল ও ফেরকাগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রত্যেক দেশে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তারপর কেন্দ্রিয় খেলাফত বা মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা, নইলে তো এ জাতীর মুক্তির দ্বিতীয় কোন পথ নেই।
জামাল দুটানায় দুদোল্যমান, যখন সে চিন্তা করে হাসান মুসান্না ইসলাম ও উম্মাহর বন্ধু, সে জাতীর মুক্তির চেষ্টা করছে, তখন তার প্রতি মনের টান অনুভব করে। কিন্তু যখনি তার মনে হয়, লোকটা দেওবন্দিদের কাফের বলে, তখনি তার মন বিষিয়ে উঠে। এভাবে তার মনে আলো আধারির খেলা চলতে থাকে। বৃহস্পতিবারে সে বাড়িতে গেল, মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার সওদা করল। ক্ষেতের ও ফিসারির জমে থাকে কাজগুলি শেষ করল। জুম্মার পর সে আবার ক্ষেতে যেতে চাইল কিন্তু অনুভব করল তার মন উল্টে গেছে, উদ্দাম গতিতে নন্দিত- নিন্দিত হাসান মুসান্নার মজলিসের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। তাই চারটে খাওয়া দাওয়া করে সে রওয়ানা করল।
দ্বিতীয় আসরঃ
মাওঃ মোজাহিদ দাঁড়িয়ে হামদ ও দুরুদ পাঠের পর শুরু করল, সুধিমন্ডলি গত শুক্রবারে আমরা কোরান হাদীসের আলোকে ফিরকাবাজি সম্পর্কে কিছু আলোচনা করে ছিলাম, আজ বাকি আলোচনা শেষ করব ইংশাআল্লাহ। কোরানের আয়াত ও হাদীসকে নস বলা হয়, নস অর্থ মুল পাঠ, টেক্সট । আর উসুলে ফিকহের পরিভাষায় নস চার প্রকারে অর্থ প্রদান করে। তন্মধ্যে প্রধান দুটি হল, ইবারাতুন নস (প্রত্যক্ষ অর্থ) ও ইশারাতুন নস (পরোক্ষ অর্থ)। সুতরাং যেসব আয়াতের ইবারাতুন নস (প্রত্যক্ষ অর্থ) দ্বারা ফিরকাবাজি হারাম করা হয়েছে- গত সপ্তাহে আমরা এমন কিছু আয়াতের আলোচনা করেছি। এখন যেসব আয়াতের ইশারাতুন নস (পরোক্ষ অর্থ) দ্বারা ফিরকাবাজি হারাম প্রমানিত- আজ সে জাতীয় কিছু আয়াতের সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করছি। কাজেই কেউ যেন এ বিতর্ক না তোলেন যে, আয়াতের প্রত্যক্ষ অর্থ ছেড়ে পরোক্ষ অর্থ গ্রহন করা হচ্ছে কেন? পুর্বেও বলেছি, ফিরকাবাজ আলেমরা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থ ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ও ফিরকা সংক্রান্ত আয়াত গুলি বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এগুলি তারা ইহুদি খৃষ্টান ও কাফের মুশরেকদের সম্পত্তি গণ্য করে বর্জন করে চলেছেন। এখন আমরা এ জাতীয় কিছু আয়াতের আলোচনা পেশ করছি। যেমন-
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗِﻴﻞَ ﻟَﻬُﻢْ ﻟَﺎ ﺗُﻔْﺴِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﻣُﺼْﻠِﺤُﻮﻥَ ‏[ ٢ : ١١ ‏] ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﺴْﺘَﻬْﺰِﺉُ ﺑِﻬِﻢْ ﻭَﻳَﻤُﺪُّﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﻃُﻐْﻴَﺎﻧِﻬِﻢْ ﻳَﻌْﻤَﻬُﻮﻥَ ‏[ ٢ : ١٥ ]
আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি।
বরং আল্লাহই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে।
বাস্তব প্রয়োগঃ যখন ফিরকাবাজদেরকে বলা হয়, উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করো না, অশান্তি সৃষ্টি করো না, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর। তখন তারা বলে, আমরা তো বিভক্তি করি না, বিদাতিদের সংশোধন করছি মাত্র। আর ঐক্য হব কেমনে, বেরেলভীরা বিদাতি, জামাতিদের আক্বিদায় সমস্যা, দেওবন্দিদের তো তাকলিদ সমস্যা, তাবলীগীরা জিহাদ খিলাফত বর্জন করেছে, সালাফিরা অতিকট্টর। কাজেই এদের ফিরকাবাজিতে আল্লাহ কিছুটা ঢিল দিয়েছেন। তবে মাঝে মধ্যে আত্মসংশোধনের জন্য কিছুটা উপহাস করেন। যেমন হেফাযতকে শাপলা চত্বরে, জামাতকে আদালতে, ব্রাদারহুডকে মিসরে, তালেবানদের পাকাফগানে, শিয়া- সুন্নিদের মধ্য প্রাচ্যে উপহাস করছেন- যেন তারা ঐক্যে ফিরে এসে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে।
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻨﻘُﻀُﻮﻥَ ﻋَﻬْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪِ ﻣِﻴﺜَﺎﻗِﻪِ ﻭَﻳَﻘْﻄَﻌُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﺃَﻣَﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻪِ ﺃَﻥ ﻳُﻮﺻَﻞَ ﻭَﻳُﻔْﺴِﺪُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ۚ ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮُﻭﻥَ ‏[ ٢ : ٢٧ ]
(বিপথগামী ওরাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ পাক যা অবিচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা ছিন্ন করে, আর পৃথিবীর বুকে অশান্তি সৃষ্টি করে। ওরা যথার্থই ক্ষতিগ্রস্ত।
বাস্তব প্রয়োগঃ কোরান হাদীসের যত জায়গায় মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও লেনদেনের উল্লেখ করা হয়েছে- সর্বত্র ইখওয়াত বা ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কোরান হাদীসের প্রধানতম নির্দেশ হচ্ছে, সকল মুসলমান ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ থাকবে কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না। কিন্তু ফিরকাবাজরা বিভিন্ন বিদাত সৃষ্টি করে উম্মাহকে হাজারটা ভাগে বিভক্ত করে পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে ভূপৃষ্ঠে বিপর্যয় ডেকে আনছে। ফলে তারা নিজেরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেই সেই সাথে ইসলাম ও উম্মাহকেও ধ্বংস করছে।
ﺃَﺗَﺄْﻣُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑِﺎﻟْﺒِﺮِّ ﻭَﺗَﻨﺴَﻮْﻥَ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﺗَﺘْﻠُﻮﻥَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ۚ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﺗَﻌْﻘِﻠُﻮﻥَ ‏[ ٢ : ٤٤ ]
তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?
বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা জনগনকে সৎকাজের উপদেশ দেয় অথচ নিজেরা ফিরকাবাজির মত হারাম কাজে লিপ্ত রয়েছে। এরা কোরান অধ্যয়ন করে কিন্তু ফিরকা সংক্রান্ত আয়াত গুলির ব্যাপারে তাদের কোন হুস জ্ঞান নেই।
ﻭَﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺃُﻣِّﻴُّﻮﻥَ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻣَﺎﻧِﻲَّ ﻭَﺇِﻥْ ﻫُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻳَﻈُﻨُّﻮﻥَ ‏[ ٢ : ٧٨ ]
তোমাদের কিছু লোক নিরক্ষর। তারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া আল্লাহর গ্রন্থের কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই।
বাস্তব প্রয়োগঃ আলেমদের ফিরকাবাজির পরিণতিতে বিশ্বময় ইসলামের পতন দেখে আরবি ভাষাজ্ঞান নাই, কোরান হাদীস বুঝে না- এমন লোকেরাও ইসলামের সেবায় এগিয়ে আসছে। কিন্তু তারা উম্মাহর উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে। যেমন হিজবুত তাওহীদ, ইসলামী সমাজ ইত্যাদি।
ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﻦ ﺗَﻤَﺴَّﻨَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻳَّﺎﻣًﺎ ﻣَّﻌْﺪُﻭﺩَﺓً ۚ ﻗُﻞْ ﺃَﺗَّﺨَﺬْﺗُﻢْ ﻋِﻨﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻬْﺪًﺍ ﻓَﻠَﻦ ﻳُﺨْﻠِﻒَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻬْﺪَﻩُ ۖ ﺃَﻡْ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ‏[ ٢ : ٨٠ ]
তারা বলেঃ আগুন আমাদিগকে কখনও স্পর্শ করবে না; কিন্তু গণাগনতি কয়েকদিন। বলে দিনঃ তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার পেয়েছ যে, আল্লাহ কখনও তার খেলাফ করবেন না-না তোমরা যা জান না, তা আল্লাহর সাথে জুড়ে দিচ্ছ।
বাস্তব প্রয়োগঃ প্রত্যেক ফেরকার লোকেরা মনে করে তারা জান্নাতি, জাহান্নাম তাদের স্পর্শও করবে না। ভাব গতিকে মনে হয় যেন তারা আল্লাহ থেকে অঙ্গিকারাবদ্ধ। অথচ তারা ফিরকাবাজির মত কুফুরি কাজে লিপ্ত রয়েছে, একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, পরস্পর মারামারি খুনাখুনি করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে।
ﻭَﺇِﺫْ ﺃَﺧَﺬْﻧَﺎ ﻣِﻴﺜَﺎﻗَﻜُﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﺴْﻔِﻜُﻮﻥَ ﺩِﻣَﺎﺀَﻛُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺨْﺮِﺟُﻮﻥَ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺩِﻳَﺎﺭِﻛُﻢْ ﺛُﻢَّ ﺃَﻗْﺮَﺭْﺗُﻢْ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﺗَﺸْﻬَﺪُﻭﻥَ ‏[ ٢ : ٨٤ ‏]
ﺛُﻢَّ ﺃَﻧﺘُﻢْ ﻫَٰﺆُﻟَﺎﺀِ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﻥَ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﺗُﺨْﺮِﺟُﻮﻥَ ﻓَﺮِﻳﻘًﺎ ﻣِّﻨﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺩِﻳَﺎﺭِﻫِﻢْ ﺗَﻈَﺎﻫَﺮُﻭﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﺑِﺎﻟْﺈِﺛْﻢِ ﻭَﺍﻟْﻌُﺪْﻭَﺍﻥِ ﻭَﺇِﻥ ﻳَﺄْﺗُﻮﻛُﻢْ ﺃُﺳَﺎﺭَﻯٰ ﺗُﻔَﺎﺩُﻭﻫُﻢْ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺤَﺮَّﻡٌ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺇِﺧْﺮَﺍﺟُﻬُﻢْ ۚ ﺃَﻓَﺘُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺒَﻌْﺾِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻭَﺗَﻜْﻔُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺒَﻌْﺾٍ ۚ ﻓَﻤَﺎ ﺟَﺰَﺍﺀُ ﻣَﻦ ﻳَﻔْﻌَﻞُ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﺧِﺰْﻱٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ۖ ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳُﺮَﺩُّﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰٰ ﺃَﺷَﺪِّ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِ ۗ ﻭَﻣَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻐَﺎﻓِﻞٍ ﻋَﻤَّﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ‏[ ٢ : ٨٥ ]
১। যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা পরস্পর খুনাখুনি করবে না এবং নিজেদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করবে না, তখন তোমরা তা স্বীকার করেছিলে এবং তোমরা তার সাক্ষ্য দিচ্ছিলে।
২। অতঃপর তোমরাই পরস্পর খুনাখুনি করছ এবং তোমাদেরই একদলকে তাদের দেশ থেকে বহিস্কার করছ। তাদের বিরুদ্ধে পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে আক্রমণ করছ। আর যদি তারাই কারও বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তবে বিনিময় নিয়ে তাদের মুক্ত করছ। অথচ তাদের বহিস্কার করাও তোমাদের জন্য অবৈধ। তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।
বাস্তব প্রয়োগঃপৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ ও গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু দু’টি গণহত্যার সামনে অন্যগুলি নিষ্প্রভ ও নাস্তি প্রমাণিত হয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে নেবুচাদ নেজার (আরবি বুখতে নসর) কর্তৃক তৎকালীন ইহুদী রাষ্ট্র জেরুজালেম ও যিহুদা ধ্বংস সাধন। সম্রাট রাজ্য দু’টি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে সকল নাগরিক হত্যা করেন। বন্দি কিছু লোককে গোলাম হিসাবে ব্যাবিলনে নিয়ে আসেন- যাদের থেকে পরবর্তী ইহুদী বংশ ধারা রক্ষা পায়।
এ সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে — ﻓَﺈِﺫَﺍﺟَﺎﺀَﻭَﻉﺏﺎَﻤُﻫﺎَﻟﻭُﺃُﺩْﻚْﻴَﻠَﻋﺎَﻨْﺜَﻋَﻦَّﻟﺍًﺩﺎَﺒِﻌْﻣُﺶٍﺳْﺄَﺒﻴِﻟﻭُﺃﺍَﺍﻮُﺳﺎَﺠَﻓٍﺪﻳِﺩَ
ﺧِﻠَﺎﻟَﺎﻟﺪِّﻳَﺎﺭِ ۚﻭَﻛَﺎﻧَﻮَﻋْﺪًﺍﻣَّﻔْﻌُﻮﻟًﺎ ‏[ ١٧ : ٥ ] — অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত সেই প্রথম সময়টি এল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা (নেবুচাদ নেজার) বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।) কারণ তখন ইহুদীদের জেরুজালেম ও যিহুদা নামের দুটি রাষ্ট্র ছিল- যারা সব সময় ঝগড়া ফাসাদ ও যুদ্ধ বিগ্রহ করে কাটাত। এজন্যই আল্লাহ তাদের ধংস করে দেন।
দ্বিতীয় ধ্বংসলীলা হচ্ছে- হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদের ধ্বংস এবং চল্লিশ লক্ষ মানুষের গণহত্যা। তদুপরি এসব মানুষের পচা গলার দুর্গন্ধ এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে সুদূর সিরিয়া পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল। এ ধ্বংসলীলার কারণ ছিল শিয়া সুন্নিরা বহির্শত্রু মোকাবিলা না করে নিজেরা নিজেরা খুনাখুনি করত।
ﻭَﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩُ ﻟَﻴْﺴَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺼَﺎﺭَﻯٰ ﻋَﻠَﻰٰ ﺷَﻲْﺀٍ ﻭَﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺼَﺎﺭَﻯٰ ﻟَﻴْﺴَﺖِ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩُ ﻋَﻠَﻰٰ ﺷَﻲْﺀٍ ﻭَﻫُﻢْ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ۗ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ﻣِﺜْﻞَ ﻗَﻮْﻟِﻬِﻢْ ۚ ﻓَﺎﻟﻠَّﻪُ ﻳَﺤْﻜُﻢُ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻓِﻴﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻓِﻴﻪِ ﻳَﺨْﺘَﻠِﻔُﻮﻥَ ‏[ ٢ : ١١٣ ]
ইহুদীরা বলে, খ্রীস্টানরা কোন ভিত্তির উপরেই নয় এবং খ্রীস্টানরা বলে, ইহুদীরা কোন ভিত্তির উপরেই নয়। অথচ ওরা সবাই কিতাব পাঠ করে! এমনিভাবে যারা মূর্খ, তারাও ওদের মতই উক্তি করে। অতএব, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা দেবেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছিল।
বাস্তব প্রয়োগঃ বর্তমানের মুসলিম ফিরকাগুলিও ঠিক অনুরুপ কথা বলে। দেওবন্দিরা বলে জামাতি বেরেলভীদের কোন ভিত্তি নাই, ওরা গুমরাহ। জামাত বলে বেরেলভী তাবলীগীরা গুমরাহ। বেরেলভীরা বলে ওয়াহাবি, দেওবন্দি জামাতিরা কোন ভিত্তির উপর নাই, সবাই গুমরাহ। আসলে এরা সবাই কোরান হাদীসের উপর ভিত্তিশীল ছিল কিন্তু যেসব বিদাতের উপর ভিত্তি করে তারা ফিরকায় বিভক্ত হয়েছে ঐসব বিদাতগুলির কোন ভিত্তি নাই। ফলে শুধুমাত্র ফিরকাবাজির কারনে ওদের ভিত্তি ধ্বসে গেল আর তারা জান্নাতের পথ ছেড়ে জাহান্নামের পথে দৌড়াতে লাগল।
ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻛُﻮﻧُﻮﺍ ﻫُﻮﺩًﺍ ﺃَﻭْ ﻧَﺼَﺎﺭَﻯٰ ﺗَﻬْﺘَﺪُﻭﺍ ۗ ﻗُﻞْ ﺑَﻞْ ﻣِﻠَّﺔَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﺣَﻨِﻴﻔًﺎ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ‏[ ٢ : ١٣٥ ]
তারা বলে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা ইব্রাহীমের ধর্মে আছি যাতে বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
বাস্তব প্রয়োগঃ এখন আর কেউ মতলক মুসলমান নাই, সবাই মুসলিমে মুক্বাইয়্যাদ- শর্তযুক্ত মুসলিম হয়ে গেছে। যেমন, সালাফি মুসলমান, জামাতী মুসলমান, তাবলীগী মুসলমান ইত্যাদি। প্রত্যেক শিশু মুসলমান হয়ে জন্ম নেয় কিন্তু ফিরকাবাজরা তখন ডাকতে থাকে ‘এসো দেওবন্দি হয়ে যাও, জামাতী হয়ে যাও, আহলে হাদীস হয়ে যাও। এভাবে মতলক মুসলমানকে ওরা শর্তযুক্ত মুসলিম মানে কাফের মুনাফিক বানিয়ে দিচ্ছে। কাজেই এদের খপ্পর থেকে বাচার একমাত্র উপায় হল এ মর্মে ঘোষণা দিতে হবে যে, রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম শিয়া সুন্নি, হানাফি, শাফেয়ি, জামাতী, দেওবন্দি, বেরেলভী ছিলেন না, তারা ছিলেন মতলক মুসলমান। কাজেই আমরাও মতলক মুসলমান। তোমরা ফিরকা বিদ্বেষের আগুনে জ্বলে পোড়ে মর, তারপর জাহান্নামে যাও, আমরা তোমাদের সাথে নাই।
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻜْﺘُﻤُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﻴِّﻨَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟْﻬُﺪَﻯٰ ﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﺎ ﺑَﻴَّﻨَّﺎﻩُ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ۙ ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻳَﻠْﻌَﻨُﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻳَﻠْﻌَﻨُﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﺎﻋِﻨُﻮﻥَ ‏[ ٢ : ١٥٩ ]
নিশ্চয় যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়েতের কথা নাযিল করেছি মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণের ও।
বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা কোরান হাদীসে স্পষ্টভাবে বিবৃত ফিরকা সংক্রান্ত নসগুলি গোপন রাখছে। নিজ নিজ ফিরকার ভিত্তি- বিদাত গুলি সর্বশক্তি দিয়ে প্রচার করছে কিন্তু ঐক্য ফরয বিভক্তি হারাম সংক্রান্ত নসগুলি ইচ্ছাপুর্বক গোপন রাখছে। আবার ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থার সুন্দর বিধানগুলি প্রচার করছে না বিধায় এরা অভিশপ্ত।
ﺇِﺫْ ﺗَﺒَﺮَّﺃَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺗُّﺒِﻌُﻮﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﺍ ﻭَﺭَﺃَﻭُﺍ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏَ ﻭَﺗَﻘَﻄَّﻌَﺖْ ﺑِﻬِﻢُ ﺍﻟْﺄَﺳْﺒَﺎﺏُ ‏[ ٢ : ١٦٦ ‏]
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﺍ ﻟَﻮْ ﺃَﻥَّ ﻟَﻨَﺎ ﻛَﺮَّﺓً ﻓَﻨَﺘَﺒَﺮَّﺃَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻛَﻤَﺎ ﺗَﺒَﺮَّﺀُﻭﺍ ﻣِﻨَّﺎ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻳُﺮِﻳﻬِﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻬُﻢْ ﺣَﺴَﺮَﺍﺕٍ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ۖ ﻭَﻣَﺎ ﻫُﻢ ﺑِﺨَﺎﺭِﺟِﻴﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‏[ ٢ : ١٦٧ ]
১। অনুসৃতরা যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং যখন আযাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক।
২। এবং অনুসারীরা বলবে, কতইনা ভাল হত, যদি আমাদিগকে পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ দেয়া হত। তাহলে আমরাও তাদের প্রতি তেমনি অসন্তুষ্ট হয়ে যেতাম, যেমন তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে আমাদের প্রতি। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দেখাবেন তাদের কৃতকর্ম তাদেরকে অনুতপ্ত করার জন্যে। অথচ, তারা কস্মিনকালেও আগুন থেকে বের হতে পারবে না।
বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজির কারনে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হচ্ছে। আর এই সর্বনাশের কারনে অনুসারী অনসৃত সবাইকে জাহান্নামে যেতে হবে। তখন কেউ কারো দায় বহন করবে না। কাজেই সময় থাকতেই সাধু সাবধান, আমি আমার দেওবন্দি ফিরকাবাজদের থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করলাম। বাকি প্রত্যেক ফেরকার অনুসারিদের আহ্বান জানাচ্ছি, খোদার গজব থেকে নিজেকে বাচাতে চাইলে স্ব স্ব ফিরকার মুরুব্বি নামক শয়তানদের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করুন।
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗِﻴﻞَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﺗَّﺒِﻌُﻮﺍ ﻣَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺑَﻞْ ﻧَﺘَّﺒِﻊُ ﻣَﺎ ﺃَﻟْﻔَﻴْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺁﺑَﺎﺀَﻧَﺎ ۗ ﺃَﻭَﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﺁﺑَﺎﺅُﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻘِﻠُﻮﻥَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻬْﺘَﺪُﻭﻥَ ‏[ ٢ : ١٧٠ ]
আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও।
বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজদেরকে যখন দাওয়াত দেয়া হয় ফিরকাবাজি ত্যাগ করে কোরান হাদীসের অনুসরণ কর। তখন তারা বলে, আমরা আমাদের মুরুব্বি ও ইমামের অনুসরণ করি। যদিও তাদের ইমাম ও মুরুব্বিরা বিদাত সৃষ্টি করে গেছেন।
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻜْﺘُﻤُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻭَﻳَﺸْﺘَﺮُﻭﻥَ ﺑِﻪِ ﺛَﻤَﻨًﺎ ﻗَﻠِﻴﻠًﺎ ۙ ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻣَﺎ ﻳَﺄْﻛُﻠُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺑُﻄُﻮﻧِﻬِﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻜَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ ‏[ ٢ : ١٧٤ ‏] ﺃُﻭﻟَٰﺊِﻙَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺷْﺘَﺮَﻭُﺍ ﺍﻟﻀَّﻠَﺎﻟَﺔَ ﺑِﺎﻟْﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏَ ﺑِﺎﻟْﻤَﻐْﻔِﺮَﺓِ ۚ ﻓَﻤَﺎ ﺃَﺻْﺒَﺮَﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‏[ ٢ : ١٧٥ ]
নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী।
বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা ফিরকা সংক্রান্ত আয়াত গুলি গোপন রাখে, নিজ নিজ ফিরকার স্বপক্ষে বিদাত মিশ্রিত বই লিখে, ওয়াজ নসিহত করে, ইমামতি করে, বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে পয়সা উপার্জন করে। এ পয়সাই তাদের জন্য আগুনের বার্তা নিয়ে আসবে।
ﻟَّﻴْﺲَ ﺍﻟْﺒِﺮَّ ﺃَﻥ ﺗُﻮَﻟُّﻮﺍ ﻭُﺟُﻮﻫَﻜُﻢْ ﻗِﺒَﻞَ ﺍﻟْﻤَﺸْﺮِﻕِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ ﻭَﻟَٰﻜِﻦَّ ﺍﻟْﺒِﺮَّ ﻣَﻦْ ﺁﻣَﻦَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂﺧِﺮِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻭَﺍﻟﻨَّﺒِﻴِّﻴﻦَ ﻭَﺁﺗَﻰ ﺍﻟْﻤَﺎﻝَ ﻋَﻠَﻰٰ ﺣُﺒِّﻪِ ﺫَﻭِﻱ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﻴَﺘَﺎﻣَﻰٰ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴَﺎﻛِﻴﻦَ ﻭَﺍﺑْﻦَ ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ ﻭَﺍﻟﺴَّﺎﺋِﻠِﻴﻦَ ﻭَﻓِﻲ ﺍﻟﺮِّﻗَﺎﺏِ ﻭَﺃَﻗَﺎﻡَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺁﺗَﻰ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻭَﺍﻟْﻤُﻮﻓُﻮﻥَ ﺑِﻌَﻬْﺪِﻫِﻢْ ﺇِﺫَﺍ ﻋَﺎﻫَﺪُﻭﺍ ۖ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﺄْﺳَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟﻀَّﺮَّﺍﺀِ ﻭَﺣِﻴﻦَ ﺍﻟْﺒَﺄْﺱِ ۗ ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺻَﺪَﻗُﻮﺍ ۖ ﻭَﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺘَّﻘُﻮﻥَ ‏[ ٢ : ١٧٧ ]
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যু

হিদায়েতের মালিক আল্লাহ

رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ ہَدَیۡتَنَا وَ ہَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَہَّابُ
(They say): “Our Lord! Let not our hearts deviate (from the truth) after You have guided us, and grant us mercy from You. Truly, You are the Bestower.”


হে আমাদের প্রতিপালক! সৎ পথ প্রদর্শনের পরে তুমি আমাদের অন্তরগুলোকে বক্র করে দিও না, আমাদেরকে তোমার নিকট হতে রহমত প্রদান কর, মূলতঃ তুমিই মহান দাতা।

বক্রএ আয়াতে বলা হয়াছে, হে আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দেওয়ার পর তুমি আবার আমাদের খারাপ রাস্তায় নিও না। এর মানে আল্লাহ তায়লা তায়ালা প্রত্যকটা মানুষকে মুসলমান হিসাবে সৃষ্টি করে হিদায়াত দিয়েছেন কিন্তু আবার এ শিশু সন্তান গুলো কেউ ইহুদি, নাসারা,খিষ্টান বানিয়ে আল্লাহর রহমত হতে সরিয়ে দিয়েছেন।শুধু তাই নয় যারা মুসলমান তারাও আল্লাহকে ভুলে গিয়ে বিভিন্ন খারাপ রাস্তয় চলেগিয়েছে এটায় বলা হেয়েছে আমাদের হিদায়ত দেওয়ার পর অন্তরগুলো বাঁকা করিও না।

এক কথায় বলা যায় আল্লাহ তায়ার রহমত ছাড়াকেউ হিদায়েত এর উপর থাকতে পারে না।আর আল্লাহ ই মহান দাতা তাই সব সময় উনার কাছেই চাইতে হবে।

কোরআনকে আমরা সঠিকভাবে মানি কি??

اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡہِ مِنۡ رَّبِّہٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَ مَلٰٓئِکَتِہٖ وَ کُتُبِہٖ وَ رُسُلِہٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِہٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ ﴿۲۸۵﴾


রসূলের কাছে তার প্রভুর পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা সে বিশ্বাস করেছে, ঈমানদারগণও তাই করেছে। সবাই আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি ও তাঁর রসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে। তারা বলেছে “আমরা তাঁর রসূলদের মধ্যে কারো সাথে কারো তারতম্য করি না।” তারা বলেছে, “আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্ষমা (প্রার্থনা করি), তোমারই কাছে সকলের প্রত্যাবর্তন।”


The Messenger has believed in what was revealed to him from his Lord, and [so have] the believers. All of them have believed in Allah and His angels and His books and His messengers, [saying], “We make no distinction between any of His messengers.” And they say, “We hear and we obey. [We seek] Your forgiveness, our Lord, and to You is the [final] destination.”

*** আয়াতে বলা হয়ছে আমারা কোন নবীর মাঝে পার্থক্য করি না,,,,কিন্তু আজ আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছাড়া অন্য কোন নবীকে নিয়ে কুটক্তি করলে কেন আমরা প্রতিবাদ করি না। বাইবেলের মাঝে নূহ(আঃ) কে নিয়ে কত বাজে কথা লিখেছে যা মানার মত নয়।ইউসুফ (আঃ) কে নিয়ে কত সিনেমা করছে কিন্তু কোথায় আমাদের প্রতিবাদ।

ইমাম মাহদী কখন আসবে দেখুন

ইমাম মাহদী আসার পূর্বের আলামত সমূহঃ


ইমাম মাহদী (আঃ) আসার আলামত হিসেবে হাদীসে যে ৭০ টি আলামত বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৬৫টি পূর্ণ হয়ে গেছে! এর কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
★ মানুষের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে -(বুখারী),
★ মানুষ চুলে কলপ ব্যবহার করবে -(আবু দাউদ),
★ ঘন ঘন ভূমিকম্প হবে-(বুখারী),
★ বিনা বিচারে হত্যাকান্ড বেড়ে যাবে-(বুখারী ও মুসলীম),
★ ঘন ঘন বাজার বসবে ও মহিলারা সর্বপ্রথম সেখানে ঢুকবে- (বুখারী, মুসলীম ও মিশকাত),
★ মহিলারা পণ্য হবে (তাদের দোকানে বসানোসহ বিভিন্ন এডভারটাইজিং করাবে),
★ পুরুষের তুলনায় মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে (বুখারী ও মুসলীম),
★ ঘন ঘন বজ্রপাত হবে। বিভিন্ন এলাকার মানুষের
যখন পরস্পরের সাথে দেখা হবে, তারা বলবে গত বজ্রপাতে তোমাদের এলাকায় কতজন মারা গেছে।
★ সুদের ছড়াছড়ি হবে।
★ দূর্নীতি বেড়ে যাবে।
★ কোন অপরাধে শাস্তি কায়েম হবে না।
★ জ্বীনা-ব্যভিচার প্রেম-ভালোবাসা, অবৈধ সম্পর্ক, পরকীয়া বেড়ে যাবে।
★ সময় দ্রুত চলে যাবে, বরকত কমে যাবে।
★ গান-বাজনা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে ও তাকে হালাল মনে করা হবে।
★ মদ্যপান বেড়ে যাবে ও তা অন্য নাম দিয়ে বিক্রি করা হবে।
★ শাসকরা কাফেরদের বন্ধু বানাবে।
★ অযোগ্য ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকবে।
★ সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র প্রায় জায়গায় নারীর কর্তৃক থাকবে।
★ নামে মাত্র মুসলিম থাকবে।
★ পাপকে পাপ না মনে করে আনন্দ করবে।
★ বেশি পরিমাণে বিদআত বৃদ্ধি পাবে।
★ আকাশ থেকে (স্যাটালাইটের মাধ্যমে- ইন্টারনেট) ফেতনা বর্ষিত হবে!
★ মুসলীম উম্মাহর একদল মূর্তিপূজা করবে (বুঝে নেন)!
★ দাসী তার প্রভুকে জন্ম দেবে (মেয়ে তার মায়ের সাথে দাসীর মত আচরণ করবে)।
★ গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকা, নর্তকীদের (Dancers) কদর বেড়ে যাবে!
★ মুসলিমরা সব জায়গায় নির্যাতিত হবে!
★ জিহাদ’সহ আরো বিভিন্ন ফরজ বিধান থেকে মানুষ দূরে থাকবে।
★ মূর্খরা আলেমদের ভূল ধরবে!
★ ফুরাত নদী শুকিয়ে যাবে (বর্তমানে শতকরা ৯৪ ভাগ পানি শুকিয়ে গেছে! খবর রাখেন?) আর তা থেকে স্বর্নের পাহাড় উঠে আসবে। শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ তা নিজের মনে করবে ও যুদ্ধে যাবে।
★ মৃত্যুকে ভয় পাবে ও জীবনের মায়া বেশি থাকবে।
★ সৌদি নেতৃত্বে তিনটি ফাটল হবে (বর্তমান বাদশাহর তিনজন ছেলে)।
বাকি ৫ টির মধ্যে ৪ আলামত পূরণ হলে কেয়ামতের দিন গোনা শুরু হয়ে যাবে! সেগুলো-
১. আলেমদের থেকে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে,
২. ক্বারিদের থেকে তেলাওয়াত উঠিয়ে নেয়া হবে,
৩. মসজিদ চাকচিক্য করবে কিন্তু মুসল্লী কম হবে।
৪. কোরআনের লেখা মুছে যাবে,
৫. পশ্চিম দিকে সূর্য উঠবে!
কি মনে হচ্ছে- কিয়ামতের দিন ঘনিয়ে এসেছে? আগে মনে হত- কিয়ামত আসতে এখনো সময় আছে। কিন্তু এখন মনে হয় কিয়ামত এতো কাছে যে হয়ত আমিও কেয়ামত দেখতে পারবো…!
মৃত্যু প্রতিদিন আমাকে-আপনাকে ৭ বার স্মরণ করছে! আমি-আপনি কয়বার মৃত্যুকে স্মরণ করছি?
আল্লাহতালা সকল মুসলমানদের ঈমান ধরে রাখার তৌফিক দান করুন। আমরা সকলেই গুনাহগার, আল্লাহ্ আমাদেরকে ক্ষমা করুক, হেফাজত করুন আমিন

আরবি বার মাস নামকরণ

আরবি বার মাসের নামকরণের ইতিহাস:
মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমে ঘোষণা করেন…..
ﺍِﻥَّ ﻋِﺪَّۃَ ﺍﻟﺸُّﮩُﻮۡﺭِ ﻋِﻨۡﺪَ ﺍﻟﻠّٰﮧِ ﺍﺛۡﻨَﺎ ﻋَﺸَﺮَ ﺷَﮩۡﺮًﺍ ﻓِﯽۡ ﮐِﺘٰﺐِ ﺍﻟﻠّٰﮧِ ﯾَﻮۡﻡَ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤٰﻮٰﺕِ ﻭَ ﺍﻟۡﺎَﺭۡﺽَ ﻣِﻨۡﮩَﺎۤ ﺍَﺭۡﺑَﻌَۃٌ ﺣُﺮُﻡٌ ؕ ﺫٰﻟِﮏَ ﺍﻟﺪِّﯾۡﻦُ ﺍﻟۡﻘَﯿِّﻢُ ۬ۙ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻈۡﻠِﻤُﻮۡﺍ ﻓِﯿۡﮩِﻦَّ ﺍَﻧۡﻔُﺴَﮑُﻢۡ ﻭَ ﻗَﺎﺗِﻠُﻮﺍ ﺍﻟۡﻤُﺸۡﺮِﮐِﯿۡﻦَ ﮐَﺎٓﻓَّۃً ﮐَﻤَﺎ ﯾُﻘَﺎﺗِﻠُﻮۡﻧَﮏُﻡۡ ﮐَﺎٓﻓَّۃً ؕ ﻭَ ﺍﻋۡﻠَﻤُﻮۡۤﺍ ﺍَﻥَّ ﺍﻟﻠّٰﮧَ ﻣَﻊَ ﺍﻟۡﻤُﺘَّﻘِﯿۡﻦَ ﴿۳۶ ﴾
নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলম করো না, আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
সুতরাং সৃষ্টির শুরু থেকেই গননায় মাস সমূহ বারটি। যথা:
১. মহররম : এর অর্থ হারামকৃত, মর্যাদাপূর্ণ। যেহেতু এ মাসের মর্যাদার কথা বিবেচনা করে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম বা নিষিদ্ধ মনে করা হতো, এ জন্য এ মাসকে মহররম বলা হয়। (গিয়াসুল লোগাত : ৪৫৭)
২. সফর : অর্থ খালি, শূন্য। মহররম মাসে যুদ্ধ বন্ধ থাকায় আরবরা এ মাসে দলে দলে যুদ্ধে যাত্রা করত। ফলে তাদের ঘর খালি হয়ে যেত। এ জন্য এ মাসের নামকরণ করা হয় ‘সফর’।
৩. রবিউল আউয়াল : শাব্দিক অর্থ : বসন্তের শুরু। এ মাসের নামকরণ করা হয় বসন্তকালের শুরু লগ্ন হওয়ার কারণে। (রেসালায়ে নুজুম-২২৯)
৪. রবিউল আখের বা সানি : বসন্তকালের শেষ পর্যায়ে হওয়ায় এ মাসের নামকরণ করা হয় রবিউল আখের। (রেসালায়ে নুজুম-২২৯)
৫. জুমাদাল উলা : আরবি শব্দ, ‘জুমূদ’ অর্থ জমে যাওয়া, স্থবির হওয়া। যখন এ মাসের নাম রাখা হয়, তখন ছিল শীতের শুরুলগ্ন। যখন ঠাণ্ডায় সব কিছু জমে যেত। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে মিল রেখে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘জুমাদাল উলা’।
৬ .জুমাদাল উখরা : শীতকালের শেষ লগ্নে গিয়ে এ মাসের নামকরণ করা হয় বলে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘জুমাদাল উখরা’।
৭. রজব : শাব্দিক অর্থ সম্মান করা। আরবরা এ মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ বলত এবং যথেষ্ট সম্মান করত। এ জন্য এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘রজব’ বলে। (রেসালায়ে নুজুম-২৩০)
৮. শাবান : শাব্দিক অর্থ ছড়িয়ে দেওয়া, বিচ্ছিন্ন হওয়া। যেহেতু এ মাসে অসংখ্য কল্যাণ আর রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হয় এবং হায়াত, মওত, রিজিক এবং তাক্বদিরের নানা বিষয় ফেরেশতাদের হাতে ন্যস্ত করা হয়, এ জন্য এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘শাবান’। অথবা এ কারণে এ মাসের নাম ‘শাবান’ রাখা হয়েছে, আরবরা রজব মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ থাকার পর এ মাসে যুদ্ধ করতে ছড়িয়ে পড়ত।
৯. রমজান : অর্থ জ্বালানো। যেহেতু এ মাসে বান্দার গুনাহ জ্বলেপুড়ে (মুছে) যায় অথবা গরমকালে এ মাসের নামকরণ করা হয়, এ জন্য এ মাসকে ‘রমজান’ বলা হয়। (ইবনে কাছির , খণ্ড ২, পৃ. ২৩৬)
১০. শাওয়াল : অর্থ ওঠানো। আরবরা এ মাসে শিকার করার উদ্দেশ্যে কাঁধে অস্ত্র ওঠাত, এ জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে ‘শাওয়াল’। (ইবনে কাছির, খণ্ড ২, পৃ. ৩০০)
১১. জিলক্বদ : অর্থ বসে থাকা। আরবরা এ মাসে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকত (বসে থাকত), এ জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে ‘জিলক্বদ’ করে। (ইবনে কাছির, খণ্ড ২, পৃ. ২২৬)
১২. জিলহজ : হজের মাস বলে একে জিলহজ বলা হয়। (ইবনে কাছির, খণ্ড ২, পৃ.

বর্তমান সমাজে যা হচ্ছে

فَوَیۡلٌ لِّلَّذِیۡنَ یَکۡتُبُوۡنَ الۡکِتٰبَ بِاَیۡدِیۡہِمۡ ٭ ثُمَّ یَقُوۡلُوۡنَ ہٰذَا مِنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ لِیَشۡتَرُوۡا بِہٖ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ فَوَیۡلٌ لَّہُمۡ مِّمَّا کَتَبَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ وَیۡلٌ لَّہُمۡ مِّمَّا یَکۡسِبُوۡنَ ﴿۷۹﴾

সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস।

শব্দটি পবিত্র কুরআনে এখানেই প্রথম ব্যবহৃত হয়েছে। ওপরে এর অর্থ করা হয়েছে, দূর্ভোগ। এছাড়া এর এক তাফসীর আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘এটি জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম, যদি পাহাড়ও এতে নিয়ে ফেলা হয় তবে তার তাপে তাও মিইয়ে যাবে’। [ইবনুল মুবারকের আয-যুহদ, নং ৩৩২]

আবু আইয়াদ আমর ইবনে আসওয়াদ আল-আনাসী বলেন, (وَيْلٌ) হচ্ছে, জাহান্নামের মূল অংশ থেকে যে পুঁজ বয়ে যাবে তার নাম [তাবারী] মোটকথা: সব রকমের শাস্তি ও ধবংস তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

[২] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “তোমরা কোন ব্যাপারে কিতাবীদেরকে কেন জিজ্ঞেস কর? অথচ তোমাদের কাছে রয়েছে তোমাদের রাসূলের কাছে নাযিলকৃত আল্লাহ্‌র কিতাব। যা সবচেয়ে আধুনিক, (আল্লাহ্‌র কাছ থেকে আসার ব্যাপারে) নবীন। তোমরা সেটা পড়ছ। আর সে কিতাবে আল্লাহ্‌ জানিয়েছেন যে, কিতাবীরা তাদের কিতাবকে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেছে। তারা সামান্য অর্থের বিনিময়ে স্বহস্তে সে কিতাব লিপিবদ্ধ করে বলেছে যে এটা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে। তোমাদের কাছে এ সমস্ত জ্ঞান আসার পরও তা তোমাদেরকে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করা থেকে নিষেধ করছে না। না, আল্লাহ্‌র শপথ! তাদের একজনকেও দেখিনি যে, সে তোমাদেরকে তোমাদের কাছে কি নাযিল হয়েছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। [বুখারী: ৭৩৬৩] সুতরাং আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কোন কিছুতেই ইয়াহুদী-নাসারাদের কোন বর্ণনার প্রয়োজন আমাদের নেই ।

فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـذَا مِنْ عِندِ اللّهِ لِيَشْتَرُواْ بِهِ ثَمَناً قَلِيلً


Then Waylun (woe) to those who write the book with their own hands and then say, “This is from Allah,” to purchase with it a little price!.

This is another category of people among the Jews who called to misguidance with falsehood and lies about Allah, thriving on unjustly amassing people’s property.

`Waylun (woe)’ carries meanings of destruction and perishing, and it is a well-known word in the Arabic language.

Az-Zuhri said that Ubadydullah bin Abdullah narrated that Ibn Abbas said,

“O Muslims! How could you ask the People of the Book about anything, while the Book of Allah (Qur’an) that He revealed to His Prophet is the most recent Book from Him and you still read it fresh and young Allah told you that the People of the Book altered the Book of Allah, changed it and wrote another book with their own hands.

They then said, `This book is from Allah,’ so that they acquired a small profit by it. Hasn’t the knowledge that came to you prohibited you from asking them By Allah! We have not seen any of them asking you about what was revealed to you.”

This Hadith was also collected by Al-Bukhari.

Al-Hasan Al-Basri said,

“The little amount here means this life and all that it contains.”

Allah’s statement,

فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا يَكْسِبُونَ



Woe to them for what their hands have written and woe to them for that they earn thereby.

means, “Woe to them because of what they have written with their own hands, the lies, falsehood and alterations. Woe to them because of the property that they unjustly acquired.”

Ad-Dahhak said that Ibn Abbas commented,
فَوَيْلٌ لَّهُم
(Woe to them),

“Means the torment will be theirs because of the lies that they wrote with their own hands,
وَوَيْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا يَكْسِبُونَ
(And woe to them for that they earn thereby), which they unjustly acquired from people, be they commoners or otherwise.

আল্লাহর কত সুন্দর বিধান

حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمۡ اُمَّہٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ وَ عَمّٰتُکُمۡ وَ خٰلٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُ الۡاَخِ وَ بَنٰتُ الۡاُخۡتِ وَ اُمَّہٰتُکُمُ الّٰتِیۡۤ اَرۡضَعۡنَکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ مِّنَ الرَّضَاعَۃِ وَ اُمَّہٰتُ نِسَآئِکُمۡ وَ رَبَآئِبُکُمُ الّٰتِیۡ فِیۡ حُجُوۡرِکُمۡ مِّنۡ نِّسَآئِکُمُ الّٰتِیۡ دَخَلۡتُمۡ بِہِنَّ ۫ فَاِنۡ لَّمۡ تَکُوۡنُوۡا دَخَلۡتُمۡ بِہِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ ۫ وَ حَلَآئِلُ اَبۡنَآئِکُمُ الَّذِیۡنَ مِنۡ اَصۡلَابِکُمۡ ۙ وَ اَنۡ تَجۡمَعُوۡا بَیۡنَ الۡاُخۡتَیۡنِ اِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿ۙ۲۳﴾


তোমাদের জন্য অবৈধ করা হয়েছে – তোমাদের মাতৃগণ, কন্যাগণ, ভগ্নিগণ, ফুফুগণ, খালাগণ, ভ্রাতৃকন্যাগণ, ভগ্নির কন্যাগণ, তোমাদের সেই মাতৃগণ যারা তোমাদেরকে স্তন্য দান করেছে, তোমাদের দুগ্ধ ভগ্নিগণ, তোমাদের স্ত্রীদের মাতৃগণ, তোমরা যাদের অভ্যন্তরে উপনীত হয়েছ সেই স্ত্রীদের যে সকল কন্যা তোমাদের ক্রোড়ে অবস্থিত; কিন্তু যদি তোমরা তাদের মধ্যে উপনীত না হয়ে থাক তাহলে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নেই; এবং ঔরসজাত পুত্রদের পত্নীগণ; এবং যা অতীত হয়ে গেছে, তদ্ব্যতীত দুই ভগ্নিকে একত্রে বিয়ে করা; নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।

কোরআন বলে কি আমরা করি কি দেখুন

وَ لَا تَنۡکِحُوا الۡمُشۡرِکٰتِ حَتّٰی یُؤۡمِنَّ ؕ وَ لَاَمَۃٌ مُّؤۡمِنَۃٌ خَیۡرٌ مِّنۡ مُّشۡرِکَۃٍ وَّ لَوۡ اَعۡجَبَتۡکُمۡ ۚ وَ لَا تُنۡکِحُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ حَتّٰی یُؤۡمِنُوۡا ؕ وَ لَعَبۡدٌ مُّؤۡمِنٌ خَیۡرٌ مِّنۡ مُّشۡرِکٍ وَّ لَوۡ اَعۡجَبَکُمۡ ؕ اُولٰٓئِکَ یَدۡعُوۡنَ اِلَی النَّارِ ۚۖ وَ اللّٰہُ یَدۡعُوۡۤا اِلَی الۡجَنَّۃِ وَ الۡمَغۡفِرَۃِ بِاِذۡنِہٖ ۚ وَ یُبَیِّنُ اٰیٰتِہٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ ﴿۲۲۱﴾٪
আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহবান করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ , যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

Design a site like this with WordPress.com
Get started